সপ্তপর্ণা বসু
তুবুনমাসি
অনুরাগকে রওনা করিয়ে দিয়ে হোটেলে ফিরে এলো রুপম আর মৈনাক।কিছু টুকটাক গোছানোর ছিল।রুপম ফ্রেশ হতে গেল, মৈনাক এসে বারান্দায় দাঁড়ালো। খুব ঘিঞ্চি এই জায়গাটা,পাহাড়ি শহরের উত্তাপ এখানে নেই। দিমমা কে ফোন করতে হবে, বার বার করে বলেছে, ফোনের ওপ্রান্তে প্রতিমা বসু।
মৈনাক বললো– দিমমা, অনুরাগ কাকুকে নিয়ে এইমাত্র তুবুনমাসিরা রওনা হলো,এবার আমরা মুর্তি যাবো।
প্রতিমা বললেন– সব ঠিক আছে তো মনি?
– এখনও অবধি,কুর্চিদি মানে তুবুনমাসীর বড় মেয়ে,তার একজন ডাক্তার বন্ধু এসেছিলেন, উনিও আছেন ওদের সাথে,ওখানকার হসপিটালে সব ব্যবস্থা করা আছে।
–আর তুবুন?
–ঠিকই আছে হয়তো,কি করে বুঝবো বলো!
–সব ঠিকঠাক মিটে যাক বাবা,খুব চিন্তায় আছি রে মনি
–ঠিক আছে, তুমি মা কে জানিয়ে দিও।
–মনি, তুবুনের সাথে থাকিস কিন্তু
‘ তুবুন’ এই নামটার সঙ্গে অনেক ছোট থেকেই পরিচয় মৈনাকের। বাড়ীর দেওয়ালে টাঙানো গ্রুপ ফটোতে,পুরনো অ্যালবামের পাতায়, দিমমার গল্পে, মায়ের কথায়, পরিবারের আলোচনায় বার বার শুনেছে এই নাম। দিমমার নাকি বড় মেয়ে!কাকে বেশি ভালোবাসে তাই নিয়ে মা আর তুবুনমাসীর মধ্যে নাকি ঝগড়া হতো! পুজোয় একই শাড়ী আসতো,সরস্বতী পূজায় আলপনা দিত তুবুনমাসি,সে নাকি দেখার মত! আর গান! আজও কোনো দরাজ গলার ছাত্রী দেখলে মা বলে,’ অনেকটাই তুবুনদির মত, তাই না মা?”,দিমমা বলে,’আমার তো তেমন লাগলো না,তুবুনকে আর পেলাম না!’ হঠাৎই কোনো একদিন সব স্তব্ধ হয়ে গেলো,গানও হারিয়ে গেলো তুবুনমাসির জীবন থেকে,এসব গল্প ভাসা ভাসা জানা ছিল মইনকের কিন্তু এই সেদিন নয়না আন্টির গান শোনার পর দিমমাকে ফোন, তারপরেই জেনেছিল বাকি থাকা গল্পের শেষট।সেদিন দিমমার আওয়াজে একটা চাপা কান্নার সুর শুনেছিল মৈনাক।
রুপম এসে বললো,
–কিরে চল!
**********
ফ্যামিলি বন্ডিং
দুপুরে মূর্তিতে গিয়ে লাঞ্চ করার কথা। জয়ী বার বার মৈনাককে ফোন করছে,রুপম বিরক্ত হতে বললো– ভিডিও অন করে রেখে দে, তুই কোথায় আছিস,কি করছিস,সব দেখতে পাবে তাহলে।
মৈনাক ফোনটা অফ করে দিয়ে বললো– ব্যাটারি শেষ।
রুপম বললো– এই রে, এবার তো আমাকে করবে, ভাই তুই অন কর।
মৈনাক বললো– তুই কি ভাবে সামলাবি তুই দেখ, আমাকে দিবি না।
–জয়ী loves you।
–Is this love! then l just hate this।কাল থেকে পঞ্চাশটা মেসেজ, আমি প্রেমে পড়েছি কিনা !
রুপম বললো– তোর ব্যাপার জানি না but আমি প্রেমে পড়েছি, thats for sure।
মৈনাক কোনো কথা বলে না বাইরে তাকিয়ে থাকে জানলা দিয়ে।কিছুক্ষণ পর জিজ্ঞেস করলো– চিনারের?
–তুই ও তো জয়ীর মতই বলছিস
dont be so shallow ইয়ার
–then?
–ওই পরিবারটার।আমি ভাবতেই পারি না আমি আর আমার মা-বাবা -দিদি এরকম একটা জায়গায় বেড়াতে এসেছি, একসাথে এঞ্জয় করছি,গান গাইছি, আড্ডা দিচ্ছি, I just miss this family bonding,দারুন লাগছিল আমার।
মৈনাক মজা করে বললো– want to be a part of this family?
রুপম হাসলো। একদিকে তিস্তা আর একদিকে পাহাড়ের গায়ে জেগে থাকা গাছ, মাথায় শুকনো কাঠের বোঝা নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে সেইসব মহিলার দল, যাদের সাথে হয়তো আসার পথে দেখা হয়েছিল! সাথে সেই ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা!
একটু দূরে গাড়িটা দাঁড় করিয়ে রেখে ড্রাইভার ভদ্রলোক নেমে গেলেন– মেইন থোড়া আতা হুঁ।
একজন মহিলার সাথে কি সব কথা বললেন, পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বাচ্চাটিকে কোলে তুলে আদর করে চলে এলেন।
মৈনাক বললো– পত্নী?
–মেরা জেনানা আউর বাচ্চা হ্যায়,সাড়ে তিন সাল
রুপম বললো– ইধার সব লোগ লকরি কিউ লাতে হ্যায়
–ওহ সব জ্বালানি হাই সাব, ইন্ধন কি লকড়ি,জঙ্গল সে লাতে হ্যায়, ফির বেচতে হ্যায়
–সব লরকি হি যাতে হ্যায়? কিউ?
–হামলোগ তো বাহার কাম করতে হ্যায়, ঘর মে তো রহেতে নেহি, কভি কভি ঘর যাতে হ্যায়
–কাঁহা সে লাতে?
–জঙ্গলে সে
–সেফ হ্যায় কেয়া?
–কেয়া করে সাব, কভি কভি তো ওয়াপাস ভি নেহি আতে হ্যায়,হাথিকা হামলা…
–কবে আসবে?
–কাঁহা সাব? ঘর?
–হ্যাঁ
–পাতা নেহি অভি কুছ,কাল ভি হো সাকতে হ্যায়, সাত দিন বাদ ভি!
মৈনাক রুপমের কাঁধে হাত রেখে বললো,
– ইয়ে ভি তো ফ্যামিলি বন্ডিং হ্যায় দোস্ত!