সপ্তপর্ণা বসু
করোনা রুখতে টানা লকডাউনে স্তব্ধ হয়ে আছে থিয়েটার মঞ্চ। আবার কবে থেকে সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে রঙ্গশালায়র আলো জ্বলবে; সঠিক উত্তর কারও জানা নেই। দীর্ঘদিন মঞ্চের বাইরে থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে উঠেছেন থিয়েটার কর্মীরা। মঞ্চে নামার জন্য ছটফট করছেন পরিচালক-অভিনেতা-অভিনেত্রী-সহ অন্যান্য কলাকুশলীরা। কি ভাবছেন তারা? থিয়েটারের সঙ্গে জড়িত সপ্তপর্ণা বসুর কলমে সেই সব কথার প্রথম কিস্তি।
ফার্স্ট বেল পড়লেই রিকুইজিশনগুলো ঠিক আছে কিনা দেখে নেওয়া, তারপর স্টেজে হেঁটে চলে বেড়ানো, সিঁড়িটা নড়ছে কিনা, পর্দা ফেলতে গিয়ে পেরেকে আটকে গেল না তো! ফ্রেমটা ঠিক মতন বসানো হয়েছে? ফুলদানির ফুলগুলো?
সেকেন্ড বেল… এবার রমাদাকে(রমাপ্রসাদ বণিক, যাঁর হাত ধরে থিয়েটারে আসা) খুঁজে বেড়ানো প্রণাম করব, তারপর একে একে বড়দের প্রণাম, সমবয়সীদের সাথে হাত মেলানো এসব করে উইং-এর পাশে, অন্ধকারে অথবা গ্রিননরুমে অপেক্ষা আর তারপরেই তো থার্ড বেল, আর তারপরে…
কিরকম স্বপ্নের মত লাগে! থিয়েটারে থেমে থাকা কাকে বলে বা কি করে থেমে থাকতে হয়, সেটা এর আগে কোনওদিন জানা ছিল না। দলের ঘরে নাটক পড়া, নাটক বাছা, রিহার্সাল ব্রেকে চপ-মুড়ি-চা, তারপর আরও বড় রিহার্সাল, দুপুরে কাছাকাছি দোকানে গিয়ে একসাথে লাঞ্চ, তারপর স্টেজ রিহার্সাল, তারপর আলোচনা তার সঙ্গে সমালোচনা, কলকাতা, শহরতলী, তার থেকেও দূরে, আরও দূরে– সবাই মিলে বাস ভাড়া করে বাসের মাথায় সেট তুলে দিয়ে কখনো ট্রেনে চেপে থিয়েটার গান-গল্প-আড্ডা, ছুটে চলেছে থিয়েটার, ছুটে চলেছে নাটক পাগল একদল ছেলেপুলে– এটাই তো জীবন নাকি থিয়েটার!
একটু আগেই কথা হচ্ছিল রাজেশ্বরীর সাথে, রাজেশ্বরী নন্দী, কলকাতাযর থিয়েটারে বেশ পরিচিত নাম এখন, আমার থেকে অনেক ছোট, কিন্তু বন্ধু, থিয়েটারের বন্ধু, ওর কাছ থেকে শুনলাম ও শেষ শো করেছে এপ্রিল মাসে– “এক মঞ্চ এক জীবন”, ‘পূর্বপশ্চিম’ নাট্যদলের হয়ে আর ‘যাদবপুর মন্থন’ এর হয়ে পশ্চিমবঙ্গ নাট্যোৎসবে, ” নক্সী কাঁথার মাঠ”। তারপর সব বন্ধ– রিহার্সালের রুম বন্ধ, থিয়েটার হলের দরজা বন্ধ, যাওয়া-আসার রাস্তা বন্ধ, চায়ের দোকানের ঝাঁপ বন্ধ— তাহলে থিয়েটার? তাহলে জীবন!
হঠাৎ ছড়িয়ে পড়লো ভাইরাস, কেউ এক্সিট করতে গিয়ে হোঁচট খেলো, কেউ এন্ট্রি নিল ভুল ডায়ালগে, ভায়োলিন বাজানোর কথা ছিল যার সে তখন ভেন্টিলেশনে, ডিমারটা হঠাৎ আটকে গেলো, অন্ধকারেই থেকে গেলো নাটকের শেষ সংলাপ।
1 Comment
Comments are closed.