নীলাম্বরী, গঙ্গা-যমুনা, ভোমরা, রাজমহল, চান্দমালা

নীলাম্বরী, গঙ্গা-যমুনা, ভোমরা, রাজমহল, চান্দমালা

বৈঠকখানা ডেস্কঃ তাঁত শিল্পের কথা বললেই প্রথমেই যে দুটি জায়গার নাম উঠে আসে, সেটি হল শান্তিপুর এবং ফুলিয়ার তাঁত। ফুলিয়া তাঁত শিল্পের ইতিহাস তেমন মেলে না। তবে  শান্তিপুরের তাঁত শিল্পের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। ১৪০৯ সালের গৌড়ের রাজা গণেশ দানু সাধনদেবের সময়ে শান্তিপুরে প্রথম শাড়ি বোনার সূচনা হয়। কিন্তু সেই শাড়ির বাণিজ্যিকভাবে কদর বাড়ে রাজা রুদ্রদেবের (১৬৮৩-১৬৯৪ সাল) সময় থেকে। তবে তাঁত শিল্পের আসল রূপ ধরা পড়ে স্বাধীনতার পরে থেকে। তারপর বাংলার ঘরে ঘরে তাঁত শিল্পের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ ঘটতে শুরু করে।

বাংলার শান্তিপুর এবং ফুলিয়ার তাঁতের শাড়ি সুপ্রসিদ্ধ হলেও দুটি শাড়ির মধ্যে কিছু সূক্ষ্ম পার্থক্য দেখা যায়। শান্তিপুরের তাঁতের শাড়িগুলো প্রথম থেকে পরম্পরা নির্ভর ও ঐতিহ্যসমৃদ্ধ। এখানকার তাঁতের শাড়ির বিশেষ আকর্ষণ হল পাড়ের নকশা এবং কারুকার্য। সেই নকশাগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই হল ফুল, জ্যামিতিক আকার, পৌরাণিক ঘটনাবলী, মন্দির ইত্যাদি দেখতে পাওয়া যায় এবং প্রত্যেকটি নকশার আলাদা আলাদা নাম আছে যেমন-নীলাম্বরী, গঙ্গা-যমুনা, ভোমরা, বেংকিপা, রাজমহল, চান্দমালা, আঁশ পাড়, বৃন্দাবনী ময়ূর পাড় ইত্যাদি। শান্তিপুর শাড়ির ভাঁজকে বলা হয় ‘গুটিভাঁজ’।

সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল শান্তিপুর একমাত্র জায়গা যেখানে এখনও হ্যান্ডলুম-এ তৈরি শাড়ির উপর বেশি নজর দেওয়া হয়। সেই জন্যই শান্তিপুরের তাঁতের শাড়ির মান প্রথম থেকে আজ অবধি গুণগত দিক থেকে একই রকম রয়েছে।

ফুলিয়ার শাড়িগুলোর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল সৃজনশীলতা। অর্থাৎ শাড়ির গুণগতমান বজায় রেখে প্রতিটি শাড়ির উপরে অভিনবত্ব ফুটিয়ে তোলা। এখানকার বিখ্যাত তাঁত শিল্পীরা হলেন সরস্বতী সরকার(রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত)সমর শীল, অচিন্ত্য মোদক, সুজিত পাল প্রমুখ।

আভিজাত্যময় ব্যবসার মধ্যে অন্যতম একটি হল তাঁত শিল্প। যার কাঁচামাল যোগান থেকে শুরু করে শাড়ি প্রেমীদের হাতে পৌঁছনো পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপে শৈল্পিক সত্ত্বা লুকিয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে এই পরিস্থিতিতে অন্য সবকিছুর মতোই প্রভাব পড়েছে এই তাঁত শিল্পের উপর। শান্তিপুর ফুলিয়ার বেশিরভাগ ঘরে ঘরে এখনও পর্যন্ত প্রধান জীবিকা রূপে এই তাঁত শিল্পকেই সবাই গ্রহণ করেছে। তাই মন্দার বাজারে যে শুধুমাত্র মহাজনদের কাছ থেকে কেনা কাঁচামালের দাম বেড়েছে তা নয়,প্রবল সংকটের মুখে পড়েছে এই তাঁত শিল্প।

আধুনিকতার মেলবন্ধনে এই শিল্পের উন্নতিতে হারিয়ে যাচ্ছে পরম্পরা। ‘হ্যান্ডলুম’-এ তৈরী হওয়া তাঁতের শাড়ি এখন পরিবর্তিত হয়ে স্থান পেয়েছে ‘পাওয়ার লুম’ মেশিনে। যেখানে খুব স্বল্প ব্যয়ে,অল্প সময়ে,প্রবল পরিমাণ শাড়ি উৎপন্ন করতে সম্ভব হলেও, কমেছে শাড়ির গুণগত মান।

administrator

Related Articles