সতেরো পর্ব

সতেরো পর্ব

সপ্তপর্ণা বসু

উৎকন্ঠা

হসপিটালের বাইরে এসে মৈনাক ফোন করলো, অনেকক্ষণ পর জয়ীর ফোনটা বাজলো। জয়ী ফোনটা স্পিকারে দিল- এখন কেমন আছেন?

-অক্সিজেন চলছে, এর বেশি কিছু জানি না, ডাক্তার দেখেছে, বাইপাপ দেওয়া, তবে ওরা শিফট করতে চাইছে, আজ মনে হয় এখানেই রাখবে, ওরা try করছে আজ রাতে বা কাল যদি শিলিগুড়ি নিয়ে যাওয়া যায়। সেরকম হলে আপাতত পাশেই একটা গেস্ট হাউস দেখেছি ওখানে কথা বলে দেখবো নইলে অন্য কোথাও একটা থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।

সৃতমা বললো– তোরা কি ফেরত আসবি নাকি আমরা যাবো?

–আমার মনে তোরা সব গুছিয়ে নিয়ে চলে আয়।

–আমারও সেটা আলোচনা করছিলাম, আর এঞ্জয় করার মতন মুড নেই।

 –আমার ব্যাগটা একটু গুছিয়ে আনিস, সব ওলটপালট করা আছে।

রুপম বললো– ও নিয়ে তোরা ভাবিস না, তোরা ওদিকটা দেখ, আমরা সব গুছিয়ে আসছি।

সামনের রাস্তাটাতে এদিক ওদিক এমনিই হাঁটছিল ওরা পাঁচ জন। আজ একটু মেঘলা আকাশ,শীতটাও অন্য দুদিনের তুলনায় যেন একটু বেশি। রুপমের অদ্ভুত একটা অনুভুতি হচ্ছিল, মনে হচ্ছিল এখন যেন এখান থেকে যেতে পারলে বাঁচে। কেন এরকম হচ্ছে!গোটা দুদিনও হয় নি পরিচয় হয়েছে যে মানুষগুলোর সাথে তাদের জন্য এই উৎকণ্ঠার কারণ কি!

শিরোনাম মি.তামাং-এর সাথে টাকা পয়সার হিসাব করছিল, সৃতমা গিয়ে বললো – ও  যো ড্রাইভারদাদা, যিনোনে আঙ্কেলকো লেকে গায়ে

তামাং বললো– হা জীবন-

–হা জীবনদা কে সাথে আপকা বাত হুয়া? ও ওয়াপাস আয়গা কেয়া? কুছ পাতা চলা?

–নেহি দিদি, বাত কুচ নেহি হুয়া।

শিরোনাম বললো – আমাদের একটা গাড়ি লাগবে, কলিংপং অবধি।

–  ঠিক হাই ম্যায় দেখতা হু।

সৃতমার পাশে এসে জয়ী বললো– এটা কি হচ্ছে!।আমি এখনও কিছু বুঝতে পারছি না!পুরো ব্যাপারটাটা কিরকম ঘোরের মতন লাগছে!

ওরা রিসেপশন রুমের সামনে পাতা বেঞ্চটায় লাইন দিয়ে বসে রইলো।

রুক্সার বললো– ওদের সাথে আলাপ না হলেই ভালো হতো। এসব নিয়ে টেনশন থাকতো না। আপন মনে ঘুরে বেড়াতাম।

জয়ী বললো– Exactly.

**********

অঙ্কিত ভার্মা

হসপিটালের পাশেই গেস্ট হাউসটা। সামনে ঘিঞ্জি একটা রাস্তা, প্রচুর দোকান, অনেক লোক। কুর্চি বারান্দায় থেকে সরে এলো। কী রকম একটা অসহায় লাগছে নিজেকে!হঠাৎই ওর অঙ্কিতের কথা মাথায় এলো।অঙ্কিত ভার্মা, এখন নর্থ বেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজে। স্কুলে কুর্চির ব্যাচমেট। স্কুলে খুব ভাব ছিল ওদের, একটা ভালোলাগাও হয়তো  ছিল। অঙ্কিত মেডিকেলে চান্স পেলো, তারপরও কথা বা দেখা হয়েছে দু-একবার, খুব কম।এখন আবার ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম—এসবের দৌলতে যোগাযোগ একটু বেড়েছে। কুর্চি অঙ্কিতকে ফোন করলো।

**********

এঞ্জেলস

সকাল পাঁচটা। ঠাকুর ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছে না নয়না।জগতধাত্রীর একটা ছবি সবসময় থাকে ওর সাথে , সেটা টেবিলের ওপর রেখে,সামনে বসে শুধু প্রার্থনা করে যাচ্ছে। চিনার ঘুমিয়েছে মনে হয়। কুর্চি সমানে একে-ওকে-তাকে  সব ফোন করছে,কত বড় হতে গেছে মেয়েটা!

চব্বিশ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলো আরও আটচল্লিশ ঘণ্টা। ঠাকুর যেন অনুরাগকে ভালো রাখেন। 

কুর্চি এসে বললো– মা, অঙ্কিতকে তোমার মনে আছে?

–কে অঙ্কিত?

–অঙ্কিত ভার্মা, আমার সাথে পড়তো, খুব আসতো আমাদের বাড়ি…

 –হ্যাঁ, হ্যাঁ, কেন রে?

–ও এখন নর্থ বেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজে আছে, ওখানকার ডক্টর, ওকে পুরোটা বললাম, আজ ও আসবে বলেছে।

–এখানে?

–হ্যাঁ,সাথে একজন ডক্টর থাকলে পুরোটা বুঝতে সুবিধা হয়, এখানে যিনি দেখলেন তিনি তো পরিষ্কার  করে কিছু বলছেন না,আমার কিরকম নার্ভাস লাগছে।অঙ্কিত এসে ওনার সাথে কথা বলবে,বলছিল শিলিগুড়িতে ওদের ওখানে শিফট করার কথা,ওর স্যারের সাথেও কথা বলে রাখবে।

নয়না বললো,

–সরকারি হসপিটাল?

 –মা, সরকারি হসপিটালই সবচেয়ে ভালো, স্পেশালি এই পরিস্থিতিতে, অঙ্কিত আছে, ও সব ব্যবস্থা করবে বলেছে।

নয়না জগতধাত্রীর দিকে চেয়ে চুপ করে বসেছিল, চিনার হঠাৎ উঠে মায়ের গলা জড়িয়ে বলল– বাবা একদম ভালো হয় যাবে মা, dont worry। 

নয়না আপনমনে বলে উঠলো– আমি না ওই ছেলেমেয়েগুলো আসবে শুনে যেভাবে ভাবে রিঅ্যাকট করেছিলাম সেটা ঠিক করিনি, কালকের রাতটার জন্যই ভগবান ওদের পাঠিয়েছিলেন।

কুর্চি বললো– এঞ্জেলস!

administrator

Related Articles