তবু

তবু

শ্রেয়সী     

চোখে চোখ পরতেই একদম সটাং মাথাটা ঘুরিয়ে নিল বাসবদত্তা। কিছু কিছু সময় এমন আসে যখন আমরা বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের সীমারেখায় বাস করি। তখন একই সঙ্গে আমরা দেখতে পাই আবার পাই না। বুঝতে চাই আবার চাই না, অনুভব করি আবার করি না। সে এক বড় অদ্ভুত Mix feeling.

“ওটা ইমন না? ও কি করছে এখানে ? আমি ঠিক দেখলাম তো নাকি ভুল?

আর একবার দেখবো? যদি ও হয়, যদি দেখে ফেলে আমায়? “

এতো কিছু ভাবতে ভাবতে কখন যে একটা হাত বাসবদত্তার কাঁধে এসে পরেছে ও খেয়ালই করে নি।

“কবে থেকে কানে কম শুনছো?”

পিছন ফিরতেই বাসবদত্তা অবাক, হ্যাঁ এই তো এই তো ইমু ওর সামনে দাঁড়িয়ে। এখন যদি ওর সামনে ডায়নোসরাস-ও চলে আসতো তাহলে ও হয়তো এতোটা অবাক হতো না যতটা এখন ইমুকে(ইমন)দেখে হয়েছে।

“বাবা এ তো দেখছি চোখেও দেখে না” কথাটা বলতে বলতে একটা সিগারেট ধরালো ইমন।

নিজেকে একটু স্বাভাবিক করে বাসবদত্তা বলতে চাইলো , আজ ও তোকে দেখলে আমি দিক শূন্য হয়ে যাই…

“আরে ইমন তুই, এদিকে? আমি আসলে চিনতেই পারি নি।কেমন আছিস? “

মানুষ আজও সঠিক সময়ে সঠিক কথাটা বলে উঠতে শেখে নি।

“এই একজনের সাথে দেখা করতে এসেছি, কাজেই বলতে পারো । কলকাতা তো কিছুই দিল না জীবনে এখন শেষ চেষ্টা যদি টাকা পয়সা কিছু জুটিয়ে দেয়।”

কথাটা বলে ইমন হো হো করে হেসে উঠলো।

“এখনো এইভাবে কথা বলিস?”

“কেন অন্য ভাবে বলার কথা ছিল বুঝি?”

“না তা না, আচ্ছা এইসব ছাড়। চল কোথাও গিয়ে বসে কথা বলি এতো রোদ।”

“আচ্ছা বেশ ছাড়লাম। চলো”- কথাটা বলে ইমন সোজা একটা চায়ের দোকানে গিয়ে বসলো। পাশেই আনন্দ পাবলিশার্স-এর দোকান তার সামনে একটা প্রাইমারি স্কুল। দুপুর বেলা তাই লোকজন ও কম বেশ চুপচাপ।

“চা খাবি?”

“একটু আগেই কাকা এক…” কথাটা শেষ করার আগেই ইমন দেখলো বাসব দুটো চা বলে দিয়েছে, একটাতে চিনি বেশি।

“তা, ডেটিং টেটিং নাকি”

ইমন কথাটা খেয়াল করেনি, ওর মন এখনো সেই “একটাতে চিনি বেশি” কথাটায়।

“কিরে আমি তো জানতাম আমিই কালা”

“না! বলো বলো কি বলছিলে? “

“ডেটিং?”

“আরে ধুর! কলকাতা আমাকে কিছু দেয়নি বললাম না। আর এই সব সাহেবি প্রেম আমার চলবে না।”

বাসব ঠিক খেয়াল করেছে এসে থেকে ৩টে সিগারেট হয়ে গেলো।

“এখনো একটুও কম করলি না smoke করা? শরীরে আর কিছু থাকবে কি?” কথাটা শুনে ইমন একটা লম্বা টান দিয়ে বলল, ” শরীরে কিছু আছে কিনা জানিনা, তবে মনে নেই”

জীবন বড়োই অদ্ভুত, কখন যে কার সাথে কার দেখা হয়ে যাবে কেউ বলতে পারে না। বাসব ভাবতো লাইফে একটা planning এর দরকার আছে নাহলে সেটেল হওয়া যায় না। কিন্তু সবাই কে কি সেটেল হতেই হয়? কতো মানুষ তো অগোছালো থাকতেই পছন্দ করে, যেমন বাসবের ইমু। আজও ইমনের কথা শুনলে বাসবদত্তার মনের ভেতরটা কেমন ঠান্ডা হয়ে যায় কতো উদ্বেগ কাজ করে। মনে হয় একটা cyclone বয়ে গেলো।

“তাহলে মনের ডাক্তার দেখা, যতো রাজ্যের কাব্য কথা।”

ইমন বাসবের দিকে তাকিয়ে বললো” তোমার চোখগুলো দেখেছো? ওরা এক কথা বলে আর তুমি অন্য কথা বলো”

“এবার একটু এইসব থেকে বেরোও, এইসব চোখ মুখ নিয়ে পরে থাকলে কলকাতা কেনো কোনো শহরই তোকে কিছু দেবে না। Be practical ইমু।”

কোনো কালেই ওদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল না, আসলে কি যে ছিল সেটা ওরা নিজেরাও জানে না তাও, দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর বাদে বাসবের মুখে ইমু ডাকটা শুনে ইমনের যেনো সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে যেতে লাগলো।

“বাঃ!নামটা মনে আছে তাহলে, am impressed.”

এবার আর হাসি থামাতে পারলো না বাসবদত্তা। বললো,”উফ্ তুই না!”

” তোমার? ” বলে, চায়ের দামটা দিয়ে একটা সিগারেট ধরালো।

“জানিস ইমু…”

কথাটা মাঝখানেই কেটে ইমন বললো, “চলো তাহলে আজ ওঠা যাক”।

যেনো কিছুটা বুঝতেই পেরেছিল ইমন যে কি বলতে চাইছে বাসবদত্তা। তাই হয়তো ইচ্ছে করেই কথাটা থামিয়ে দিলো।

” তুই বলতিস জীবনে অপূর্ণতা রাখতে নেই”

“হুম, বুঝলাম”

“তোর মুখটা দেখলে আজ-ও আমার কেমন কান্না পায়”

“এই সেরেছে! এতো খারাপ দেখতে নাকি আমি? এটা তো জানা ছিল না” কথাটা বলে খুব জোরে হেসে উঠলো ইমন।

বাসবদত্তা কেমন বোকার মতোন তাকিয়ে রইলো আর মনে মনে ভাবতে লাগলো,” মানুষ এতোটা নিষ্প্রাণ কি করে হতে পারে কি করে এতোটা নর্মাল থাকতে পারে। ইমু কি সত্যি পাল্টে গেলো? আমার উপস্থিতি কি ওকে একটুও ভাবায় না? সব কিছু কি এতোই সহজ? “

“তুই অনেক বদলে গেছিস ইমন। অনেক বড়ো হয়ে গেছিস। সত্যি আমি খুব বোকা আজও কেমন একই ভাবে ভাবি। একটু বেশি ভাবি হয়তো, জানি এইসবের কোনো মানে নেই, তবু… “

হঠাৎ পাশের আনন্দ পাবলিশার্স-এর দোকানে বেজে উঠলো, ” তবু বলে কেনো সহসাই থেমে গেলে, বলো কি বলিতে এলে… “

বিকেল চারটে, স্কুল ছুটি হয়েছে সব বাচ্চারা হইহই করে দৌড়ে বেরোচ্ছে। তাও কেমন ওরা দুজন দুজনের হৃদস্পন্দন শুনতে পারছে পরিষ্কার। সত্যি কার যে কখন কার সাথে দেখা হয়ে যাবে এটা বলা খুব মুশকিল। বাসবদত্তা আজকে বুঝতে পারছে জীবনে সবকিছু plan করে করা যায় না। আর ওপর দিকে আজ ইমন বুঝতে পারছে, সত্যি গোটা জীবনটা শুধু মাত্র দুটো চোখকে আঁকড়ে ধরে বাঁচা যায় না।

এতো আমিলের মধ্যেও ওদের মধ্যে একটা জিনিসের বড্ড মিল আছে আজও …………

“এতো বেশি আমি নিকটে এসেছি তার

ছুঁতে পারে হাত, কোমরের গাঢ় বাঁক।

ছুঁতে পারে বুক, নিতম্ব অনায়াসে

এতো বেশি তার নাগালে এসেছি আমি।”

যেনো দুজনেই দুজনকে বললো, “এমন ভেঙ্গে চুরে ভালো কেউ বাসেনি আগে।”

administrator

Related Articles